বিমানবন্দর থেকে বাড়ির অন্দর, কোথাও কোনো সুরক্ষা নেই। করোনা আজ ধনী-গরিব সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। অর্থের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও কেউ চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। বাংলাদেশে জন্ম নিয়েও যাঁরা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন, তাঁরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, নিজ দেশ যদি উন্নত থাকত তবে আজ তিনি কিছুটা হলেও জীবনের নিরাপত্তা পেতেন।
কথায় কথায় যাঁরা চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতেন, তাঁরা আজ অনুভব করছেন, দেশের চিকিৎসাসেবাকে শক্তিশালী না করায় আজ কত ভয়াবহ হুমকির মুখে আমরা। না আছে খাদ্যের সুরক্ষা, না চিকিৎসার। আজ যেন বাতাসে বিষ ছড়িয়ে গেছে। প্রতিটি নিশ্বাসে অপেক্ষা করছে মৃত্যুর শীতল পরশ।
১. বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিরা সরকারি কোয়ারেন্টিনে থাকতে চাইছেন না, তাঁদের অভিযোগ—সেখানকার অবস্থা মোটেও ভালো নয়। ফলে বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। আর হোম কোয়ারেন্টিনে যাঁদের থাকার কথা, তাঁরা বিদেশ–বিভুঁই হওয়ায় ঘরে থাকতে চাইছেন না। ‘কতক্ষণ আর নিজেকে বদ্ধ রাখা যায়’ বলেই বেরিয়ে পড়ছেন গ্রামের হাটবাজারে, দোকানে। প্রবাসীদের বড় অংশ কাজের শেষে ইন্টারনেটে সময় কাটায়। দেশের গ্রামে-গঞ্জে ওয়াইফাই সুবিধা নেই। সিম কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেট খরচ অনেক বেশি। ব্যাপারটি অনেকের কাছে তুচ্ছ মনে হলেও বলছি—কম টাকায় সিমের ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করার নির্দেশ দিন। অন্তত হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষ ঘরে বসে বসে লম্বা সময় কাটাতে পারবেন। এক মাসের জন্য ফ্রি করে দিলে ভালো হয়।
২. চিকিৎসকেরা পর্যন্ত ভয়ে আছেন। তাঁদের কাছে করোনা–প্রতিরোধী পোশাক নেই। কেউ আক্রান্ত হলেও নার্স বা ডাক্তার তাঁদের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন। করোনা না হওয়া সত্ত্বেও শুধু সন্দেহের কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজে একটি মেয়ে মারা গেছে চিকিৎসা না পেয়ে। এমনকি করোনাভাইরাসের সতর্কতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার চিকিৎসক হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এমন অবস্থায় বোঝাই যাচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসা দেওয়ার মতো অবস্থা দেশে নেই। তাই যাঁরা বিদেশ থেকে দেশে আসতে চাইছেন, তাঁরা আক্রান্ত হলে বিদেশে যে চিকিৎসা পাবেন, দেশে তা পাবেন না। তাই অন্তত বাংলাদেশের চেয়ে যে দেশে আপনি আছেন, সেখানে চিকিৎসা–সুরক্ষা তুলনামূলক বেশি পাবেন।
৩. দেশে দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থা জারি করুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো হোক। মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশের কালোবাজারি, মানহীন উৎপাদন, বাড়তি দাম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক। সম্ভব হলে ও প্রয়োজন হলে অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের কাজে লাগানো হোক। তবে চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে কোনো চিকিৎসকই সেবা দিতে রাজি হবেন না। আর সব ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেকোনো ধরনের জমায়েত, আড্ডা ভেঙে দিক।
৪. দেশ বাঁচলে আপনি বাঁচবেন, আপনি বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই বর্তমান ও ভবিষ্যতের দুর্নীতিবাজরা নিজ দেশের কথা একটু ভাবুন। দেশের সম্পদ, মানুষের সম্পদকে লুণ্ঠন না করে দেশের কল্যাণে কাজ করেন। করোনাই শেষ নয়, অনুরূপ অন্য কোনো দুর্যোগও আসতে পারে। সেই দুর্যোগে দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়লে মানুষগুলো আর সামনে এগোতে পারবে না। এই মৃত্যুর দুয়ার থেকে আমরা একসঙ্গে বাঁচার ও দেশটাকে গড়ার প্রত্যয় নিই। আল্লাহ সবাইকে নিরাপদে রাখুন।
*লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। msikhan717@gmail.com


0 Comments